ছেলেটি ভারি বিরক্ত করছে। মা কিছুতেই সুস্থ মনে রান্না করতে পারছেন না। কখনও ভাঁড়ারের সবজি ছড়াচ্ছে তো কখনও আবার কলসীর জলের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে জল ছেটাচ্ছে ৷পরক্ষণে আবার মায়ের আঁচল ধরে টানাটানি করছে ৷
– কী চাস বলতো? আমাকে রান্না করতে দিবি না নাকি?
মায়ের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে ছেলেটি তার দুষ্টুমি চালিয়েই চলে।
মা যতই তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন – ছেলেটির দুষ্টুমি যেন ততই বেড়ে যাচ্ছে। মা একটু রাগতস্বরে কথা বললে কিছুক্ষণ চুপ থাকছে। তারপর আবার …
কোনোভাবেই ছেলেকে শান্ত করতে না পেরে মা একটু ছলনার আশ্রয় নিলেন আর দশটা মায়ের মতই। ছেলের মুখে-মাথায় সস্নেহে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন -শোনো বাবা, তুমি যদি ও’ঘরে গিয়ে এখন ঘুমোও – তাহ’লে ঘুম থেকে উঠলেই আমি তোমাকে সন্দেশ খেতে দেবো ৷
সন্দেশের নাম শুনেই খুশিতে ছেলেটির মন যেন পাল্টে গেল ৷
হাসিমুখে বলল -ঠিক বলছো মা? সন্দেশ দেবে তো ?
– হ্যাঁ বাবা। তুমি এখন গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
– আচ্ছা মা ৷
সন্দেশ পাবার আশায় পাঁচ বছরের ছোট্ট ছেলেটি তার সমস্ত দুষ্টুমি ভুলে মায়ের কথামত ঘুমোতে চলে গেল পাশের শোবার ঘরে।
মা-ও আপাতত ছেলের দুষ্টুমির হাত থেকে রেহাই পেয়ে রান্নার কাজে মন দিলেন।
পাশের অন্য একটি ঘরে বসে ছেলেটির বাবা বই পড়ছিলেন। মা আর ছেলের কথাবার্তা হয়তো তারও কান পর্যন্ত গিয়েছিল। কী জানি কী ভেবে তিনি বইপত্র গুঁটিয়ে রাখেন। তারপর কাঁধে একটা ফতুয়া ঝুলিয়ে কোথাও একটা যাবার জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন।
ব্যাপারটা ছেলেটির মা দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে বললেন – এই ভরদুপুরে তুমি আবার কোথায় চললে ? একটু আগেই তো বলছিলে, এ’বেলায় এই ঠা ঠা রোদে আর কোথাও বেরোবে না ৷
ছেলেটির বাবা গিন্নির কথার উত্তর দিতে রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন ৷ বললেন – সন্দেশ কিনতে ৷
– সন্দেশ ? কেন ?
– তুমি যে ছেলেকে বললে- ঘুম থেকে উঠলেই তাকে সন্দেশ খেতে দেবে। তা তোমার ভাঁড়ারে কি সন্দেশ আছে ?
– না নেই। তাতে কী ? এই অসময়ে আর তোমাকে এককোশ পথ হেঁটে সন্দেশ আনতে যেতে হবে না ৷
– ঘুমের থেকে উঠেই তোমার কাছে ছেলে যখন সন্দেশ চাইবে তখন কী করবে ?
– ও কি আর তখন ওর মনে থাকবে ৷ শিশু মন৷ ভুলে যাবে। আর যদি চায়ও তো ব’লে দেবো – বাবা রাতে এনে দেবেন ৷
– না, তা হয় না গিন্নি ৷ ওকে যখন তুমি আশ্বাস দিয়েছো ঘুম থেকে উঠলেই সন্দেশ দেবে – সে কথা তো তোমার রাখতেই হবে ৷ তাই ও ঘুম থেকে ওঠার আগে ঘরে সন্দেশ এনে রাখতে হবে যাতে তুমি ছেলের কাছে মিথ্যাবাদী হয়ে না যাও।
গিন্নি চুপচাপ তার পণ্ডিত আর আদর্শবাদী স্বামীর কথা শুনছেন আর নিজের ভুলটা উপলব্ধি করতে পারছেন।
স্বামী আরো বললেন – তা না করলে তোমার প্রতি ওর বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যাবে। ভাববে মা তো ওরকম বলেন। তোমার কোনো কথাই তখন আর ও বিশ্বাস করবে না। শিশু বলে তার সাথে ছলনা করলে সে বুঝতে পারবে না বা কিছু হবে না এ’রকম কখনো ভাববে না। এভাবেই মা-বাবা-পরিজনদের কাছ থেকেই শিশুরা নিজের অজান্তে ভাল বা খারাপ সংস্কার পেয়ে পেয়েই বেড়ে ওঠে- যা তার পরবর্তী জীবনে-যাপনে ফুটে ওঠে ৷
স্বামীর কথার মমার্থ বুঝতে পেয়ে গিন্নি মনে মনে প্রতীজ্ঞা করলেন- এমন ভুল আর তিনি ভুলেও করবেন না।
এই আদর্শবাদী বিবেকবান বাবা আসলে কে জানো ? ঠাকুরদাশ বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই ছোট্ট ছেলেটি আর কেউ নয় – স্বয়ং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ৷
loading...
loading...
কেমন আছেন সবাই? অনেকদিন পর ব্লগে এলাম ৷ সবার জন্য শুভ কামনা রইল।
loading...
অসাধারণ ভাবে লিখাটিকে ফুটিয়ে তুলেছেন প্রিয় কবি শংকর দেবনাথ।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। অনেকদিন পর আপনার দেখা পেলাম। আশা করবো ভালো ছিলেন। আমরাও ভালো আছি। আশীর্বাদপ্রার্থী।
loading...
চমৎকার কথাগুলো। ভীষণ মুগ্ধ হলাম পাঠে।
loading...